ওয়েবসাইট কাকে বলে?
ওয়েবসাইট হল ইন্টারনেটে একটি পেজ বা সেট অফ পেজ যেখানে বিভিন্ন ধরণের তথ্য, লেখা, চিত্র, ভিডিও, অডিও, সংযোজন, গেম, ই-কমার্স সাইট, সেবাসমূহ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাধারণভাবে পাওয়া যেতে পারে। এই ওয়েবসাইট ইন্টারনেট ব্রাউজারে দেখা, পাওয়া এবং ব্যবহার করা যেতে পারে।
ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন ধরণের তথ্য প্রদান করতে, সেবা দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়, এবং এটা ওয়েব ডেভেলপারদের দ্বারা তৈরি হয়। একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যের ধরণ ভিন্নভিন্ন হতে পারে, যেমন খবর, ব্লগ, শিক্ষাগত, উপকার সংক্রান্ত, ওয়েবসাইটে আপনি তথ্য খুঁজতে, মতামত প্রকাশ করতে, কোনও ধরণের বাণিজ্যিক অপারেশন চালাতে, ব্লগ লেখাতে, শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য পেতে, গেম খেলতে, এবং বৃহত্তর ধরণের সামাজ কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যবহৃত হয়।
ওয়েবসাইট প্রধাণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে
স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট (Static Website):
এই ধরণের ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট স্থির এবং অপরিবর্তনশীল, অর্থাৎ এই ধরণের ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট ব্যাকেন্ড সিস্টেমের প্রয়োগ করা হয় না। এই ধরণের ওয়েবসাইটে স্থায়ী তথ্য, যেমন কোম্পানি প্রেজেন্টেশন, কন্ট্যাক্ট ইনফরমেশন, ব্লগ পোস্ট, প্রোডাক্ট লিস্টিং ইত্যাদি থাকতে পারে।
স্ট্যাটিক ওয়েবসাইটের কিছু বৈশিষ্ট্য নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
- স্থায়ী কন্টেন্ট: এই ধরণের ওয়েবসাইটের পৃষ্ঠা ও কন্টেন্ট স্থায়ী এবং পরিবর্তন না হওয়ার সুবিধা থাকে।
- HTML এবং CSS: স্ট্যাটিক ওয়েবসাইটগুলি মূলভূতভাবে HTML (Hypertext Markup Language) এবং CSS (Cascading Style Sheets) ব্যবহার করে তৈরি হয়, এবং এদের মাধ্যমে কন্টেন্ট প্রদর্শন এবং স্টাইলিং করা হয়। কোন ধরনের বেকেন্ড প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করা হয় না। তবে ওয়েবসাইটকে সুন্দর এবং আকর্ষণীয় করে তুলতে JavaScript ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- নির্ধারিত লেখক: স্ট্যাটিক ওয়েবসাইটে আপনি কোন কিছু পরিবর্তন করতে চাইলে ওয়েব ডেভেলপারের সাহায্য প্রয়োজন হয়, কারণ সাধারণভাবে কোনও কিছু আপডেট করতে ব্যবহারকারীর কোন কিছু আপডেট করতে পারে না। তবে HTML এবং CSS সম্পর্কে বেসিক ধারণা থাকলে আপনি তথ্য, ছবি, কন্টেন্টসহ অন্যান্য সব কিছু পরিবর্তন করতে পারবেন।
- প্রস্তাবিত স্থায়ী তথ্য: স্ট্যাটিক ওয়েবসাইটে অধিকাংশ তথ্য সাধারণভাবে প্রস্তুত এবং স্থায়ী থাকে, এবং এখানে কোনও ব্লগ, নিউজ সেকশন, ব্যবসায়িক পর্যালোচনা, বা সাময়িক আপডেট সাধারণভাবে খোলামেলা থাকে না। যেমন আপনি ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিতে পারেন, বন্ধুদের পোস্টে লাইক কমেন্টস করতে পারেন। স্ট্যাটিক ওয়েবসাইটে এসবের কোন সুযোগ নেই।
ডায়নামিক ওয়েবসাইট (Dynamic Website):
ডায়নামিক ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট দ্রুত পরিবর্তন করা যেতে পারে এবং ব্যবহারকারীর নীতি অনুসারে কাস্টমাইজ করা যায়, সাধারণভাবে এই ধরণের ওয়েবসাইটের জন্য ডাটাবেস ব্যবহার করা হয়।
ওয়েবসাইটের ধরণ এবং কাজ অনুসারে ওয়েবসাইট বিভিন্ন ধরণের হতে পারে, যা নিম্নলিখিত:
নিউজ পোর্টাল ওয়েবসাইট (News Portal Website) :
নিউজ পোর্টাল ওয়েবসাইট হলো সংবাদ, খবর, সংবাদ সংক্রান্ত লেখা, ছবি, ভিডিও বা অন্যান্য মিডিয়া প্রদান করে। এই ধরণের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন নিউজ পড়া, সংবাদ সংস্থা, ব্লগার, জার্নালিস্ট, ই-মিডিয়া প্রতিষ্ঠান, এবং অন্যান্য সংবাদ সার্ভিস প্রদান করে এবং ব্যবহারকারীদের নতুন ও পুরানো সংবাদ পড়তে এবং জানতে সাহায্য করে।
নিউজ পোর্টাল ওয়েবসাইটে সাধারণভাবে বিভিন্ন সেকশন থাকে, যেখানে প্রতিষ্ঠান নিউজ, আন্তর্জাতিক নিউজ, খেলাধুলা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ব্যান্ডারবিশ, ব্যবসা, বিনোদন, জীবনযাপন, স্বাস্থ্য, এবং অন্যান্য বিষয়ে নিউজ সংবাদ প্রদান হয়। নিউজ পোর্টাল ওয়েবসাইট সাধারণভাবে পাঠকদের নিউজ প্রকাশনে সংবাদের মূল উৎস হিসেবে কাজ করে এবং ব্যবহারকারীদের আপনার প্রাথমিক সংবাদে আপডেট থাকতে সাহায্য করে। যেমন: prothomalo.com, ittefaq.com.bd, bdnews24.com ইত্যাদি।
ই-কমার্স ওয়েবসাইট:
ই-কমার্স ওয়েবসাইট হলো একটি ওয়েব পেজ বা ইন্টার্নেটের পৃষ্ঠা, যা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির দ্বারা তৈরি হয় এবং বিভিন্ন প্রকারের প্রোডাক্ট বা সেবা প্রদান করে এবং কাস্টমারদের সাথে ই-কমার্স (ইলেকট্রনিক কমার্স) মাধ্যমে লেনদেন করার সুযোগ প্রদান করে। এই ধরণের ওয়েবসাইট প্রধানভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ কেনাকাটা, ডিজিটাল বিপণন, ব্যবসা পরিচালনা, লেনদেন, স্টক প্রবন্ধন, এবং অন্যান্য ই-কমার্স গোষ্ঠীর ব্যবহারে এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে। যেমন: daraz.com.bd, chaldal.com, startech.com.bd ইত্যাদি
ব্লগিং ওয়েবসাইট (Blogging Website):
এই ধরণের ওয়েবসাইটে লেখা, পোস্ট, ইনফরমেশন প্রদান করা হয়, যা সময় সময়ে আপডেট করা হয় এবং সাধারণভাবে ক্যাটেগরি ভিত্তিক।
একটি ব্লগ ওয়েবসাইট হলো একটি ওয়েবসাইট, যেখানে ব্লগার এবং লেখকরা বিভিন্ন বিষয়ে লেখা, পোস্ট, অনুবাদ, আলোচনা, এবং রিভিউ প্রদান করে। এই পোস্টগুলি সাধারণভাবে সামাজিক বন্ধুদের, অন্য ব্লগারদের, বা সাধারণ পাঠকদের সাথে সম্পর্ক করার সুযোগ প্রদান করে এবং সাধারণভাবে সমৃদ্ধ কমিউনিটি তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ amardailynews.com, wirebd.com, hoichoibangla.com, instabangla.com ইত্যাদি
ই-লার্নিং ওয়েবসাইট
ই-লার্নিং ওয়েবসাইট হলো একটি ওয়েবসাইট, যা ব্যবহারকারীদের শেখা, শিখা, এবং সবকিছুতে উন্নত হতে সাহায্য করে। এই ধরণের ওয়েবসাইট বিভিন্ন ধরণের শিক্ষানুভব, অনলাইন শিক্ষা, টিউটরিং, কোর্স, লেখা, ভিডিও পাঠ, প্রশিক্ষণ, ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন বিষয়ে শেখানোর উপায় প্রদান করে। যেমন: udemy.com, 10minuteschool.com, eshikhon.com ইত্যাদি।
সোশ্যাল ওয়েবসাইট:
সোশ্যাল ওয়েবসাইট হলো ব্যবহারকারীদের সাথে সোশ্যাল ইন্টারেকশন এবং যোগাযোগের জন্য তৈরি করা হয়। এই ধরণের ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন সামাজিক ক্রিয়া, তথ্য ভাগাভাগি, আপডেট, চ্যাট, ছবি, ভিডিও, লিংক, এবং অন্যান্য মিডিয়া শেয়ার করতে সাহায্য করে। সাধারণভাবে, এই ধরণের ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারীদের স্বত্ত্ব, আপডেট, এবং অন্য ব্যক্তিগত তথ্য সেভ করা থাকে, এবং তাদের সাথে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক তৈরি করা যেতে পারে। জনপ্রিয় সোশ্যাল সাইট যেমন: facebook.com. twitter.com, instagram.com ইত্যাদি। তবে সোশাল ওয়েবসাইটে কখনো ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না।
কমিউনিটি ফোরাম ওয়েবসাইট:
কমিউনিটি ফোরাম ওয়েবসাইট হলো একটি ওয়েবসাইট, যা একটি অনলাইন কমিউনিটির সদস্যদের মধ্যে আলোচনা, প্রশ্নোত্তর, সাহায্য, এবং সামগ্রিক বিনামূল্যে প্রদান করার জন্য তৈরি হয়। এই ধরণের ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের আলোচনা করতে এবং সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে, সাধারণভাবে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ থাকতে পারে, যেমন: ফোরাম বোর্ড, থ্রেড এবং পোস্ট, মডারেশন, ব্যবহারকারী প্রোফাইল ইত্যাদি। brightbangladeshforum.org, bidyanondo.org ইত্যাদি ওয়েবসাইটগুলো কমিউনিটি ফোরাম ওয়েবসাইটের আওতাভূক্ত।
ওয়েবসাইটের সুবিধা
সামগ্রিক তথ্য: ওয়েবসাইট আপনাকে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য প্রদান করে, যেমন আপনার সম্পাদকিয় উদ্দেশ্য, কোম্পানির বিবরণ, প্রোডাক্ট বা সেবা, যোগাযোগের তথ্য, আপনার কাজের সময়সূচী এবং আপনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ।
সহজ ন্যাভিগেশন: ওয়েবসাইটের মেন্যু এবং লিঙ্ক সহজভাবে ওয়েবসাইটে বিচরন করার সুযোগ দেয় এবং বিভিন্ন পৃষ্ঠা এবং সেকশনে পৌঁছাতে সাহায্য করে।
আত্ম-প্রকাশ: ওয়েবসাইট আপনাকে আপনার এবং আপনার সম্পাদকিয় সামগ্রিক নির্দেশনা পরিচালনা করতে সাহায্য করতে পারে, এবং আপনি নিজের প্রোফাইল সম্পাদনা এবং পরিচালনা করতে সহজ করে।
সার্চ ক্যাপাবিলিটি: গুগল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে যে কেউ আপনার ওয়েবসাইটটি খুঁজে বের করতে পারে। ওয়েবসাইট একটি সার্চ প্রবেশযোগ্য বক্স বা সার্চবার উপস্থাপন করে, যেটি ব্যবহারকারীদের ওয়েবসাইটে যে কোন কিছু খোঁজার সুযোগ প্রদান করে।
ব্লগ এবং প্রকাশনা: ওয়েবসাইটে ব্লগ সেকশন যোগ করে স্বল্পব্যাপী প্রকাশনা করতে পারেন এবং নিজের ব্যক্তিগত লেখা বা নিজের প্রতিষ্ঠানের সংবাদ জনগণের কাছে প্রকাশ করতে পারেন।
ব্যবহারকারীর পূর্বাভাস: ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবার পূর্বাভাস দেওয়া যেতে পারে, যা কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স সাজানোর সাথে সাথে গ্রাহকের আগ্রহ সৃজন করতে সাহায্য করে। যেমন দেখবেন, অ্যাপল, স্যামসাংসহ অন্যান্য নামিদামী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কোন প্রোডাক্ট বাজারে আসার আগে তাদের ওয়েবসাইটে প্রোডাক্টের বিস্তারিত তথ্য আপলোড করে থাকে শুধুমাত্র তাদের গ্রাহকদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য।
মোবাইল সুবিধা: ওয়েবসাইটটি মোবাইল ডিভাইসে সঠিকভাবে লোড হওয়া উচিত, যাতে ব্যবহারকারীরা মোবাইল ডিভাইস দিয়ে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে সাহায্য পেতে পারে।
যোগাযোগের সুবিধা: ওয়েবসাইটে যোগাযোগের ফরম বা ইমেইল দেওয়া থাকলে তার মাধ্যমে সেবা প্রার্থিরা ইমেইল ঠিকানা, মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করে আপনার থেকে সেবা নিতে পারবে। এবং ব্যবহারকারীদের আপনার বার্তার জবাব দেওয়া সম্ভব হবে।
ওয়েবসাইটের সুবিধা সংক্রান্তে আরো সহজভাবে বলতে গেলে:
১. ঘরে বসেই কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়া যায়।
২. ওয়েবসাইট থেকে দ্রুত তথ্য সংরক্ষণ ও আরহনণ করা যায়।
৩. ওয়েবপেজে বিভিন্ন ধরনের স্ত্রিপ্ট ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করা যায়।
৪. ওয়েবসাইটগুলোর মাধ্যমে বিনা মূল্যে বিজ্ঞাপন প্রচার করা যায়।
৫. বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে যে কোন সময় তথ্যেও আদান -প্রদান করা যায়।
৬. ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়।
৭. ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যে কোন তথ্য, অডিও,ভিডিও,এবং ছবি ইত্যাদি প্রচার করা যায়।
৮. ওয়রবসাইটের মাধ্যমে সামাজিক, রাজনৈতিক,সংস্কৃতিকসহ প্রভৃতি বিষয়ে নিজস্ব মতামত ইপস্থাপন করা যায়।
৯. যে কোন বিষয় যেমন-কোন নির্দিষ্ট। স্থানের তাপমাত্রা, বাস, রেল, ও প্লেনের সময়সূচি, ভাড়া,ইত্যাদি জানা যায়।
১০. ঘরে বসে বিশ্বের নামকরা লাইব্রেরি থেকে বই পড়া বা ডাউনলোড করা যায়, এমনকি বিদেশী ডিগ্রীও অর্জন করা যায়।