ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হলো ২০২৪ সালের বৈষম্য বিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপেক্ষিতে সৃষ্ট অসহযোগ আন্দোলনের ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সংগঠিত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন অস্থায়ী সরকার ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক এবং সেনাবাহিনী প্রধান দ্বারা নিশ্চিত করা হয়। এবং ৮ আগস্ট শপথ গ্রহণের মাধ্যমে ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসকে অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপতি ৬ আগস্ট সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
আমরা আলোচনা করব অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে বিভিন্ন জিজ্ঞাসা:
১. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাকে বলে?
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হলো একটি অস্থায়ী প্রশাসন, যা একটি দেশের সাধারণ নির্বাচন বা রাজনৈতিক সংকটের সময় নিয়মিত সরকারের পরিবর্তে দায়িত্ব পালন করে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা। এই সরকার সাধারণত নিরপেক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হয়, যাতে কোনো রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব না থাকে। তারা নীতি নির্ধারণ বা বড় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে না, বরং দেশের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নতুন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে।
২. কেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রয়োজন হয়?
অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার সাধারণত প্রয়োজন হয় একটি নির্বাচনের সময়, যাতে নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ থাকে। এটি বিদ্যমান সরকারের ক্ষমতা প্রয়োগকে সীমিত করে এবং নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।
৩. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ কী?
অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের মূল কাজ হলো দেশের প্রশাসনিক কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়া এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা। তাদের কোনো নীতিগত পরিবর্তন বা বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকে না।
আপনার শিশু মোবাইলের প্রতি আসক্ত হচ্ছে নাতো? শিশুদের মোবাইল আশক্তি কমানোর উপায়
৪. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেমন গঠিত হয়?
অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার সাধারণত নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হয়। এর মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বা সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি থাকতে পারে, যারা রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বারা নিরপেক্ষ বলে বিবেচিত।
৫. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ কতদিন?
অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ সাধারণত সীমিত সময়ের জন্য হয়, যা নির্বাচনের আগে থেকে শুরু হয়ে নির্বাচনের পর পর্যন্ত চলে, যতক্ষণ না নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে।
৬. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কি আইনি ভিত্তি রয়েছে?
অনেক দেশে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের জন্য সংবিধানে বিশেষ বিধান থাকে। যেখানে এমন ব্যবস্থা না থাকলেও বিশেষ আইনের মাধ্যমে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে।
৭. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন কিভাবে অনুষ্ঠিত হয়?
অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন সাধারণত স্বাধীন নির্বাচন কমিশন দ্বারা পরিচালিত হয়। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধানে থাকে, এবং অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে।
৮. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে বিতর্ক কি হতে পারে?
অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার নিয়ে বিতর্ক হতে পারে যদি সেটি রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগের মুখোমুখি হয়, বা যদি দলগুলো মনে করে যে সরকার নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে না।
৯. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাদের দ্বারা গঠিত হয়?
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাধারণত নিরপেক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত হয়, যেমন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বা সম্মানিত নাগরিক যাদের কোনো রাজনৈতিক দলীয় সম্পর্ক নেই।
১০. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি সাধারণত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে?
না, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাধারণত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে না। তাদের কাজ হলো নির্বাচন পরিচালনা করা এবং একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা।
১১. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো নীতি নির্ধারণ করার ক্ষমতা থাকে কি?
না, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল কাজ হলো দেশের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং নির্বাচন আয়োজন করা। তারা সাধারণত কোনো নতুন নীতি বা আইন প্রণয়ন করে না।
১২. কীভাবে নিশ্চিত করা হয় যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ থাকবে?
নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে এমন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যারা রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ বলে বিবেচিত। এছাড়া, তাদের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে তারা কোনো রাজনৈতিক কার্যকলাপে যুক্ত থাকতে পারেন না।
১৩. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতদিন ধরে ক্ষমতায় থাকে?
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ নির্ভর করে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সময়সীমার উপর। এটি সাধারণত নির্বাচনের আগে শুরু হয়ে নতুন সরকার শপথ না নেওয়া পর্যন্ত চলে।
১৪. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয় কীভাবে?
অনেক দেশে সংবিধান বা আইন অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা থাকে। যেখানে এমন কোনো বিশেষ নিয়ম না থাকে, সেখানে বিশেষ আইনের মাধ্যমে বা রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হতে পারে।
১৫. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কি ধরনের বিরোধ থাকতে পারে?
বিরোধ দেখা দিতে পারে যদি কোনো রাজনৈতিক দল মনে করে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে বা নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু হচ্ছে না। এছাড়া, সরকারের গঠন নিয়ে মতানৈক্যও হতে পারে।
১৬. নির্বাচনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা কী?
নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কার্যক্রম পরিচালনা করে। নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর তাদের ভূমিকা শেষ হয়।
১৭. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কি কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা তত্ত্বাবধান করতে পারে?
কিছু ক্ষেত্রে, আন্তর্জাতিক সংস্থা বা পর্যবেক্ষক দল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করে থাকে, বিশেষত যদি দেশটি রাজনৈতিক সংকট বা অস্থিতিশীলতার মধ্যে থাকে।
২০২৪ সালের ৫ ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গনঅভ্যূথানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সকল সমন্বয়কদের সাথে আলোচনা করে ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস স্যারের নাম প্রস্তাব করা হয় এবং তিনি উক্ত প্রস্তাবে রাজি হন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সবাই তাকেই উপযুক্ত বলে মনে করেছেন। তিনি গত ৮ ই আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষুদ্রঋণ ও ক্ষুদ্রবিত্ত ধারণার প্রেরণার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস তাঁর মেধা ও শ্রম দিয়ে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।