অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তির খাতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের জন্য একটি যুগান্তকারী অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ “জিডি” এই সিস্টেমটি অলাইনে করার ব্যবস্থা করেছে। গত তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ পুলিশের এই অনলাইন সেবাটি উদ্বোধন করেছেন। গত ২১ জুন রোজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ পুলিশের এই অনলাইন সেবাটি উদ্বোধন করেছেন।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, রাজারবাগের পুলিশ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানটিতে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন। এর পর থেকে জিডি করার জন্য আর থানায় যেতে হবে না। তবে অনলাইনে জিডি করার সুবিধাটি পেতে হলে কিছু নিয়ম মেনে যেকোন জায়গা থেকে দেশের যেকোন থানায় জিডি করতে পারবেন। আপনি কোন ধরণের জিডি এবং কিভাবে করবেন সেটা নিয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করব।
প্রথম ধাপ, Online GD আ্যাপে প্রোফইল কিভাবে তৈরী করবেন?
অনলাইনে জিডি করার জন্য আপনার একটি প্রোফাইল থাকতে হবে। এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা প্রথমেই গুগল প্লে স্টোর থেকে Online GD নামক এ্যাপটি ডাউনলোড করতে হবে। তারপর এ্যাপে প্রবেশ করার পর এখানে আপনার একাউন্ট না থাকলে নিবন্ধন করুন এ ক্লিক করলে আরেকটি পেইজ আসবে সেখানে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রে নম্বর এবং জন্ম তারিখ দিয়ে পরিচয়পত্র যাচাই বাটনে ক্লিক করুন।
আপনার পরিচয়পত্র যাচাইয়ের পর আরেকটি পেজে আপনার পিতা মাতার নামসহ তথ্য আসবে, যদি তা সঠিক হয় তাহলে নিচের বাটনে ক্লিক করুন। তারপর আপনার এনআইডি’র ছবির সাথে আপনার ছবি ভেরিফাই করার জন্য আপনার ফোনের ক্যামেরা চালু হবে। সেখানে এ্যাপের নির্দেশনা অনুযায়ী আপনার ফেইস ভেরিফাই হওয়ার পর আপনার ব্যাবহৃত মোবাইল নম্বর এবং পার্সওয়ার্ড পবেশ করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করলে আপনার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে ওটিটিপি ভেরিফিকেশনের মাধ্যামে আপনার Online GD এ্যাকাউন্ড তৈরী হয়ে যাবে। পরবতীতে লগইন করার সময় আপনার প্রদত্ত মোবাইল নম্বর এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার কর লগইন করবেন।
কারো কাছে আপনার এনআইডি’র তথ্য থাকলেও ফেইস ভেরিফিকেশন থাকার কারণে কেউ উক্ত তথ্য দিয়ে অনলাইন জিডি এ্যাপে অ্যাকাউন্ট তৈরী করার কোন সম্ভাবনা নেই। কোন কারণে অনলাইন জিডি এ্যাপ আপনার ফেইস ভেরিফাই করতে যদি সমস্যা করে যেমন এনআইডি’র ছবিতে দাড়ি ছিল না এখন দাড়ি রেখেছেন , পূর্বে স্বাস্থ্য কম ছিল এখন একটু স্বাস্থ্য ভালো হয়েছে বা অন্যান্য কোন কারণে বর্তমান লাইভ ছবি ভেরিফাই না হলে নিকটস্থ থানায় গিয়ে আপনার অ্যাকাউন্ট তৈরী করতে পারবেন। আপনার প্রোফাইল তৈরী হয়ে গেলে পরবর্তীতে এ্যাপ এবং ওয়েব এ্যাপ্লিকেশনের লিংক https://gd.police.gov.bd/Auth/Account/Login ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট থানায় অনলাইনের মাধ্যমে জিডি করতে পারবেন।
দ্বিতীয় ধাপ, কোন কোন জিডি অনলাইনে করেতে পারবেন এবং কিভাবে?
প্রধানত, আপনি হারানো এবং পাওয়া সংক্রান্তে অনলাইনে জিডি করতে পারবেন। আপনার অস্থায়ী সম্পত্তি যেমন যানবাহন, কম্পিউটার, মোবাইল, বিভিন্ন ডকুমেন্টস, কার্ডস, গহনা, পশুপাখি, ইলেক্ট্রনিক্স, চাবি, টাকা পয়সা, ব্যাগ, গার্মেন্টস, প্রসাধনী, ঘড়ি, ছাতা ইত্যাদি হারিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি’র জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। অনুরুপভাবে উপরিউক্ত কোন কিছু পাওয়া গেলেও আপনি তৎ বিষয়ে জিডি করতে পারবেন।
কোন কিছু হারিয়ে গেলে “হারানো” অপশনে ক্লিক করলে আপনার কোন ধরনের সম্পত্তি হারিয়েছে তা নির্বাচন করার জন্য উপরে প্রদত্ত অপশনগুলো দেখাতে পাবেন তা থেকে যে কোন একটি নির্বাচন করুন।
ধরুন আপনার মোবাইল হারিয়েছে, মোবাইল ফোন অপশনে ক্লিক করার পরে আপনার সামনে আকেটা পেইজ আসবে। প্রথম অপশনে আপনার মোবাইলে তথ্য যেমন মোবাইলের ব্রান্ড, মডেল, অপারেটিং সিস্টেম, আইএমইআই নম্বর সমূহ, মোবাইলের দাম, মোবাইলের কালার এবং উক্ত মোবাইলে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরসহ অন্যান্য তথ্য প্রবেশ করুন। আপনার অবর্তমানে জরুরী যোগাযোগের জন্য কাছের যেকোন একজনের তথ্য দিতে হবে। এরপর পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুন।
পরের অপশনে রয়েছে মোবাইল সনাক্তকরণের তথ্য। এখানে আপনার মোবাইল সনাক্ত করা যায় এমন তথ্য প্রবেশ করুন যেমন ফোনের কালার, ফোনের ছবি, ফোনের বক্সের ছবিসহ ইত্যাদি দিতে হবে। সব তথ্য প্রবেশ করার পর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।
পরবর্তী বাটনে ক্লিক করার পর হারিয়ে যাওয়ার স্থান, সময় ও বিবরণ প্রবেশ করার জন্য একটি ইনপুট ফিল্ড আসবে। এখানে আপনি যে থানায় জিডি করতে চান ওই বিভাগ, জেলা, থানা, ওয়ার্ড ও এলাকা সিলেক্ট করুন। তারপর ঘটনার বিবরণে ফোনটি কোথায় হারিয়েছে তা উল্ল্যেখ করুন।
আমরা অনলাইনে জিডি’র প্রাষ শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। সর্বশেষে আরেকটি অপশন দেখবেন “এন্ট্রি ফর” অনলাইন জিডি’র ক্ষেত্রে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি নিজের জন্য জিডি করছেন তাহলে নিজ অপশনে সিলেক্ট করা থাকবে আর যদি আপনি অন্য কারোর জন্য জিডি করছে তাহলে অন্য জন অপশন সিলেক্ট করলে উক্ত ব্যক্তির এনআইডি নম্বর, জন্মতারিখ প্রবেশ করে ভেরিফাই বাটনে ক্লিক করলে ইনপুটকৃত তথ্য সঠিক হলে এনআইডি’র তথ্য সয়ংক্রিয়ভাবে জেনারেট হয়ে যাবে। এনআইডি হতে প্রাপ্ত মোবাইল নম্বর সঠিক আছে কিনা মিলিয়ে নিবেন।
যদিও আপনি মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করতে পারবেন। তারপর সাবমিট বাটনে ক্লিক করলে আরেকটি পেজে আপনার ইনপুট কৃত সকল তথ্য প্রদর্শিত হবে যদি তা সঠিক না হয় তাহলে এডিট বাটনে ক্লিক করে সংশোধন করতে পারবেন। সকল তথ্য সঠিক হয়ে থাকলে I have agree to accept Terms & Condition and Policy তে টিক চিহ্ন দিযে ফাইনাল সাবমিট বাটনে ক্লিক করলে আপনার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একটি ওটিপি আসবে ওই ওটিপি টি ইনপুট দিয়ে কনফার্ম করলেই সংশ্লিষ্ট থানার জিউটি অফিসারের কাছে আপনার জিডি’র আবেদন পৌঁছে যাবে এবং আপনার ফোনে একটি কনফার্ম মেসেজ আসবে।
পরবর্তীতে উক্ত থানার ডিউটি অফিসার আপনার আবেদনটি জিডি যোগ্য হলে একটি জিডি নম্বর দিয়ে সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে অফিসার ইনচার্জের কাছে প্রেরণ করবেন । তৎক্ষনাত আপনার ফোনে জিডি নম্বর এবং তারিখ সম্বলিত একটি বার্তা আসবে এবং সফ্টওয়্যার থেকে আপনার জিডি’র আবেদনটি প্রিন্ট করে যে কোন প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন। কারণ উক্ত জিডি’র আবেদনে একটি কিউকার কোড থাকবে উক্ত কিউআর কোড স্ক্যান করলে উক্ত জিডি’র নম্বর ও তারিখ প্রদর্শিত হবে।
পরবর্তীতে অফিসার ইনচার্জ উক্ত আবেদনটি একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা নির্বাচন করে তাঁর কাছে তদন্তভার হস্তান্তর করবেন। এর পরপরই আপনার ফোনে উক্ত তদন্তকারীর সাথে যোগাযোগের তথ্য সম্বলিত একটি বার্তা আসবে। এবং পরবর্তীতে আপনার ফোন পাওয়া গেলে বা কোন অগ্রগতি থাকলে আপনাকে অটোমেটিক ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে জানানো হবে।