বর্তমানে বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং একটি জনপ্রিয় পেশা। যেহেতু নিজের ইচ্ছে বা পছন্দসই কাজগুলো ঘরে বসে করতে পারছেন আর পেমেন্টও পাচ্ছেন তুলনামূলক ভালো। যারা রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামের মত ঝামেলাসহ অন্যান্য অসুবিধার জন্য অফিসে গিয়ে কর্পোরেট জব করতে চান না তাদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং একটি অত্যান্ত মজার পেশা। একটি নির্দিষ্ট টাইমে অফিসে যাওয়ার কোন মাথাব্যাথা নেই, যখন খুশি তখন কাজ করা যায়, ক্লাইন্টদেরকে কাজ জমা দেওয়ার একটি নির্দিষ্ট ডেডলাইন থাকে। তাই সবাই এই পেশায় যুক্ত হতে চান। আজকে আমরা আলোচনা করব ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য কেমন কনফিগারেশনের কম্পিউটার প্রয়োজন। আশা করি সবাই পাশে থাকবেন আর আপনাদের মতামত কমেন্টে জানাবেন।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে কাজ রয়েছে, আপনি কি কাজ করতে বেশি পছন্দ করেন সবটাই আপনার উপর নির্ভর করে। তাই আপনার কাজের উপর ভিত্তি করে আপনার পছন্দের কম্পিউটার বেছে নিতে পারবেন। বর্তমান মার্কেটে বিভিন্ন ব্রান্ডের বিভিন্ন কনফিগারেশনের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ পাওয়া যায়। তাই আমরা আজকে কিছু কম্পিউটার নিয়ে কথা বলব যেটা আপনার জন্য বেস্ট হবে।
গবেষণা, লেখালেখি, ব্লগিং ও মার্কেটিং
বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে গবেষণা, লেখালেখি, ব্লগিং ও মার্কেটিং সেক্টরে সাধারণত ডাটা এন্ট্রি, অনুবাদ, আর্টিকেল বা পোস্ট লিখা, এসইও, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, লিড জেনারেশন, এবং ভিডিও, ইমেইল, ইকমার্স মার্কেটিং ইত্যাদি এরূপ কাজগুলো নিয়ে কাজ করতে গেলে বেশ দামি বা দ্রুত গতি সম্পন্ন কম্পিউটার বা হাই কনফিগারেশনের কম্পিউটারের প্রয়োজন পড়ে না। এসব কাজের জন্য ইন্টারনেটে নিয়মিত তথ্য খুজতে হয়। তার জন্য আপনার কম্পিউটারে দ্রুত গতির ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। ব্রাউজার ছাড়া অন্য কোন সফ্টওয়্যার ব্যবহার করা তেমন একটা প্রয়োজন পড়ে না বিধায় লেটেস্ট ভার্সনের কম্পিউটারের প্রয়োজন নেই। তবে ২৫৬ হতে ৫১২ জিবি এসএসডিসহ র্যাম ৪ হতে ৮ জিবির মধ্যে হলেই হবে। প্রথমত পুরাতন বা সেকেন্ড হ্যান্ড একটি কম্পিউটার দিয়ে আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। পরবর্তীতে আপনার কাজের ডিমান্ড অনুযায়ী ভালো কনফিগারেশনের ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ কম্পিউটার নিতে পারেন।
আইটি বা সফ্টওয়ার সংক্রান্ত কাজ
এই সেক্টরের কাজগুলো হলো নেটওয়ার্কিং, ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট মোবাইল এন্ড কম্পিউটার সফ্টওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ডাটাবেজ ক্রিয়েট ও ম্যানেজমেন্ট, ডাটা সাইন্স, ডাটা এনালিষ্ট, সাইবার সিকিউরিটি, এআই ইত্যাদি। এসকল কাজগুলো করার জন্য সাধারণত উন্নতমানের কম্পিউটারের প্রয়োজন হয় না। আপনি যেহেতু নতুন হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ শুরু করবেন সেহেতু ৫১২ গিগাবাইট এসএসডি এবং ৪ থেকে ১৬ গিগাবাইট র্যাম রয়েছে এমন মিডিয়াম মানের যেকোনো ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ ব্যবহার করতে পারেন। সেইম কনফিগারেশনের মধ্যে তুলতামুলকভাবে ল্যাপটপের চাইতে ডেস্কটপ কম্পিউটারের কার্যক্ষমতা একটু বেশিই হয়ে থাকে। আইটি রিলেটেড কাজগুলো শিখার জন্য পুরাতন কম্পিউটার যেমন ৪ থেকে ৮ জিবি র্যাম এবং ৫১২ জিবি এসএসডির ক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটার হলেই মোটামুটি শিখার কাজটা চালিয়ে নিতে পারবেন। পরবর্তীতে র্যাম এবং প্রসেসর হালনাগাদ করা যায় এমন কম্পিউটার নিলে ভালো হবে কারণ কাজের পরিধি বাড়ার সাথে সাথে আপনার কম্পিউটারও হালনাগাদ করার প্রয়োজন হবে।
ডিজাইন এবং গ্রাফিক্স সংক্রান্ত কাজ
ডিজাইন এবং গ্রাফিক্স সেক্টরে রয়েছে ইউআই/ইউএক্স, লগু ডিজাইন, ফটো ও ভিডিও এডিটিং, থ্রিডি, এনিমেশন, ভিডিও সম্পাদনা, ভয়েস আর্টিস্ট, আর্কিটেকচার এবং বিল্ডিং ডিজাইন, ভিজুয়াল ইফেক্ট ইত্যাদি। এসকল কাজগুলো করার জন্য হাই কনফিগারেশনের কম্পিউটারের পাশাপাশি ভালো মানের গ্রাফিক্স কার্ডসহ বড় মনিটর বা ডাবল মনিটর থাকা প্রয়োজন। কারন এসব কাজের জন্য কালার কম্বিনেশন ঠিক রাখার জন্য সব ধরনের কালার প্রোফাইল সাপোর্ট করতে হবে। অন্যথায় আপনি যেভাবে আপনার কাজগুলো করতে চাইছেন তেমন করতে পারবেন না। বর্তমান বাজারে ভালো কনফিগারেশনের কম্পিউটার বলতে প্রসেসর Core i5 এর কম নহে, ৫১২ গিগাবাইটের এম .২ এসএসডি থাকলে কম্পিউটার দ্রুত গতির হবে, আপনি যেহেতু বড় বড় ফাইলে কাজ করবেন সেহেতু সেগুলো সেভ রাখার জন্য ৫০০ গিগাবাইটের হার্ডডিক্স থাকতে হবে, ৮ হতে ১৬ জিবির মধ্যে র্যাম ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শেখার জন্য প্রথমে ভালো মানের কম্পিউটার না নিলেও পারেন। পরবর্তীতে আপনার পছন্দের কাজ শেখার পরে অনলাইন থেকে আয় করে আপনার পছন্দের ভালো মানের কম্পিউটারটি কিনতে পারবেন। বাংলাদেশের অনেক সফল ফ্রিল্যান্সার পুরাতন কম্পিউার দিয়ে কাজ শিখে এখন স্বাবলম্ভী হয়েছেন, অনেকে অন্যের কম্পিউটার ব্যবহার করে অনলাইনে ক্লায়েন্টের কাজ করে ইনকামের টাকা দিয়ে নিজের কম্পিউটার কিনেছেন। তাই বর্তমানে আপনার হাতের নাগালে যে প্রযুক্তির কম্পিউটার রয়েছে সেটা দিয়ে শুরু করুন।